
এখন থেকেই ১০০০০০ বছর আগেও দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পুরোটা জুড়ে ছিল গহীন জঙ্গল আনুমানিক ৭০ থেকে ৮০ হাজার বছর আগে এই এলাকায় প্রথম আদি মানুষের বসবাস শুরু হলে ধীরে ধীরে সে জঙ্গলের আয়তন সংকুচিত হতে থাকে যারা পর্যন্ত বিশ্বের বৃহত্তম জঙ্গল এর অবস্থান ছিল এই দক্ষিণ এশিয়ায় যদিও বর্তমানে খেতাব দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন জঙ্গলের মাথায় উঠেছে যাইহোক সুপ্রাচীন সেই জঙ্গলের বিশাল একটা অংশের অবস্থান ছিল ভারত মহাসাগর এবং বঙ্গোপসাগরের উপকূল এলাকায় প্রাকৃতিক কারণেই উপকূলীয় এলাকায় জঙ্গলের চেহারা ক্রান্তীয় বনের বদলে ম্যানগ্রোভ বনের পরিণত হয় ম্যানগ্রোভ বনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এই বনের উদ্ভিদগুলো দিনে একাধিকবার সমুদ্রের জোয়ার এর কারণে নোনা পানিতে অর্ধেক ডুবে থাকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উপকূলীয় এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই ম্যানগ্রোভ বনের খন্ডিত ভগ্নাংশ.
ওদিকে আছে ভারতের তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত ম্যানগ্রোভ বন ভগ্নাংশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিন্তু বিলুপ্তপ্রায় সেই সুপ্রাচীন ম্যানগ্রোভ বনের টিকে থাকা সবচেয়ে বড় অংশটির নাম সুন্দরবন বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুটি জেলায় বৃষ্টি এখনো বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনের খেতাব ধরে রেখেছে প্রিয় দর্শক আপনাদের সুন্দরবন সম্পর্কে জানাতে এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে চলুন তবে আর দেরি না করে আদ্যোপান্ত এই পর্বে সুন্দরবন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসি বাংলাদেশি খুলনা বিভাগ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর ও দক্ষিণ ২৪পরগনা এই দুটো জেলা মিলিয়ে বিস্তৃত বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার মোটাদাগে এর শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ.
ছয় হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আর বাকি শতকরা ৪০ ভাগ বাচ্চার হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা ভারতে নিয়ন্ত্রণাধীন জমির প্রচলিত এককের হিসেবে এই সুন্দরবনের আয়তন প্রায় ২৫ লাখ একর বিস্ময়কর ব্যাপার হলো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনের আয়তন মাত্র তিন হাজারেরও কম ভৌগোলিকভাবে সুন্দরবনের সীমানা দুটো নদীতে নির্দিষ্ট করা হয়েছে পূর্ব থেকে ভারতের হুগলি নদী আর পশ্চিমে বাংলাদেশের বলেশ্বর নদীর মধ্যবর্তী ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের আনুষ্ঠানিক নাম সুন্দরবন নামকরণ নিয়ে একাধিক মতবাদ প্রচলিত রয়েছে এর মধ্যে সর্বোচ্চ সমর্থনপুষ্ট মতবাদ অনুযায়ী সুন্দরী নামক এক ধরনের গাছের নাম অনুসরণ করে সুন্দরবনের নাম রাখা হয়েছিল তবে এর বিপরীতে কেউ কেউ বলেন সমুদ্র বন্দর চন্দ্রবতী অপভ্রংশের কারণে সুন্দরবন এ পরিণত হয়.
উত্তরের হিমালয় পর্বতমালা থেকে নেমে আসা গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা এই তিনটি জলধারার মোহনা এই সুন্দরবন এলাকায় অবস্থিত এই সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার বছর আগে থেকেই মানুষের বসতি থাকলেও ইতিহাসে প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় তৃতীয় শতকের মাঝামাঝি সময়ে প্রায় ১৮০০ বছর আগেই এখানে চাঁদ সওদাগর নামক এক ব্যক্তি একটি জনপদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা সুন্দরবনের বাঘ মারা এলাকায় চাঁদ সদাগরের হাতে গোড়াপত্তন হওয়া একটি প্রাচীন শহরের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেছেন এরপর এক হাজার বছরের বেশি সময় ইতিহাসের পাতায় বনাঞ্চলের উল্লেখ করা হয়নি অবশেষে ত্রয়োদশ শতকের মুঘল শাসন আমলে সুন্দরবনের কথা বলা হয়েছে বিশেষ করে মুঘল রাজবংশ তৃতীয় সম্রাট আকবরের শাসন আমলে তার সেনাবাহিনীর আক্রমণ থেকে প্রাণ বাঁচাতে স্থানীয় অনেকেই গহীন সুন্দরবন.
আশ্রয় নিয়েছিলেন পলাতক এই মানুষগুলোর তৈরি করা বাসস্থানগুলো সপ্তদশ শতকে পর্তুগিজ জলদস্যুদের দখলে চলে যায় এই রাস্তা গুলো থেকে তারা নিয়মিত মুঘল ভারতের বিভিন্ন জনপদ এ হামলা চালানো এখনো অনেক প্রান্তিক মানুষের সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে এদের একটা বড় অংশের জীবিকা উপার্জনের একমাত্র উপায় মাছ শিকার এর পাশাপাশি কিছু সম্প্রদায়ের মানুষ প্রতিবছর একটা নির্দিষ্ট সময় সুন্দরবন থেকে মৌমাছির মধু আহরণে ব্যস্ত থাকেন সাথী বিশ্বের অন্যতম বিপদজনক পেশাগুলোর একটি কারণ এই অভিযানে প্রতি পদক্ষেপে থাকে বাঘের খাদ্য পরিণত হবার আশঙ্কায় মহাশক্তিশালী প্রাণীর আক্রমণ থেকে বেঁচে গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার চিহ্ন বাকি জীবন বয়ে বেড়াতে হয় তবে এই বিপদ মোকাবেলায় অসাধারন বুদ্ধি বের করেছেন মৌ শিকারীরা বাঘ সিংহের মত.
প্রাণীগুলো তাদের দিকে কেউ তাকিয়ে আছে টের পেলে সাধারনত আর হামলা চালায় না যে কারণে বাদ সব সময় তাঁর শিকারের পেছন থেকে হামলা চালায় সুন্দরবনের মধু সংগ্রহের সময় শিকারিরা তাদের মাথার পেছনে একটি মুখোশ বেঁধে রাখেন সেই মুখোশের চোখজোড়া তাকিয়ে আছে বলে মনে হয় মুখোশ ব্যবহারকারীর ওপর হামলা চালানো থেকে বিরত থাকে সুন্দরবন নামক বনাঞ্চলের উপর প্রথম সার্ভিস চালানোর কৃতিত্ব ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দখলে রয়েছে ১৭৫৭ সালে মুঘল বাদশাহ আলমগীরের কাছ থেকে এই বনাঞ্চলের স্বত্বাধিকার লাভ করে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানটি যার ১২ বছরের মাথায় তারা সুন্দরবনের প্রথম সার্ভে প্রকল্প শুরু করে জেনে অবাক হবেন স্থানীয়দের মধ্যে জনপ্রিয়তার কারণ এই সেই সার্ভে করা হয়েছিল ফার্সি ভাষায় এর ধারাবাহিকতায় ৮৬০ সালে বনাঞ্চলটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তৎকালীন ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার প্রদেশ একটি বন বিভাগ চালু করা হয়.
এই বিভাগের সদর দপ্তরে অবস্থান ছিল বর্তমান বাংলাদেশের খুলনা জেলায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য নিয়ে কথা বলতে গেলে অবধারিতভাবে প্রথমেই যে প্রাণীটির কথা বলতে হবে সেটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার আক্ষরিক অর্থেই রাজসিক এ প্রাণীটি তার হলুদের উপর কালোটা রঙের জন্য বিখ্যাত এই প্রজাতির পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ সদস্যদের না থেকে নিজের ডগা পর্যন্ত গড় দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ ফুট তবে এর মধ্যে প্রাণীটির লেজের দৈর্ঘ্য প্রায় তিন ফুটের মত এদের গর্জন ২০০ থেকে আড়াইশো কেজির মতো হয়ে থাকে তবে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় ব্যক্তির ওজন ছিল পুরসভা 300kg প্রকৃতিতেই প্রাণীগুলো নিভৃতচারী হয়ে থাকে এরা বন্যশূকর হরিণ এবং মহিষের মত প্রাণী শিকার এর মাধ্যমিক জীবন ধারণ করে বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় আনুমানিক আড়াই হাজারের মত রয়েল বেঙ্গল টাইগার রয়েছে এর শতকরা দশভাগ সুন্দর.
বসবাস করে রয়েল বেঙ্গল টাইগার এর পাশাপাশি সুন্দরবনের বাসিন্দা বন্য প্রাণীদের মধ্যে রেসাস বানর হরিণ নোনা পানির কুমির এবং করাত মাছ উল্লেখযোগ্য এছাড়া ইরাবতীর নামক এক প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদী নালা বসবাস করে তবে নদী দূষণের কারণে এদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে বাঘের মতোই বনে বসবাসকারী অনিন্দ্যসুন্দর চিতল হরিণ এর অস্তিত্ব হুমকির মধ্যে রয়েছে একসময় পুরো সুন্দরবন কয়েক লাখ হরিণ ঘুরে বেড়ালেও বর্তমানে সংখ্যা কমে ৩০ হাজারে নেমে এসেছেন আরে বনাঞ্চল থেকে এরই মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণীর তালিকায় রয়েছে জাভান রাইনোসরাস নামক এক প্রজাতির শিং-বিহীন গন্ডার উদ্বেগের বিষয় হলো বিভিন্ন কারণে সুন্দরবনের আয়তন ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে ২০০ বছর আগেও ব্রিটিশদের পড়ে.
জানিত সার্ভে অনুযায়ী এই বনাঞ্চলের আয়তন ছিল প্রায় ১৭ হাজার বর্গকিলোমিটার ৪২ লাখেরও বেশি জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং মানুষের পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত রয়েছে বিশেষ করে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বঙ্গোপসাগরের উপকূল এলাকায় প্রায় প্রতিবছরই একাধিক ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে আর কয়েকবছর পর পরই মহাশক্তিশালী এক একটি ঘূর্ণিঝড়ে এলাকায় তাণ্ডব চালিয়ে যায় জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০৭ সালে এক ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে সুন্দরবনের শতকরা ৪০ ভাগ উজাড় হয়ে যায় সেই ক্ষতির মাত্রা পুরোপুরি বুঝে ওঠার আগেই দুই বছরের মাথায় বনাঞ্চলের আঘাত হানে আইলা নামের বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় ছড়েও সুন্দরবনের বিদ্যমান জীববৈচিত্রের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রাকৃতিক কারণে ও সুন্দরবন ধ্বংসের মানবসৃষ্ট কারণ এর ভূমিকা অনেক এর মধ্যে প্রথমে.
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির বিষয়টি ২০০৭ সালে ইউনেস্কো পরিচালিত এক গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী বিশ্বের বিভিন্ন দেশ প্যারিস জলবায়ু চুক্তি শর্তগুলো পূরণে ব্যর্থ হলে এই শতকের শেষ নাগাদ বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা ৪৫ সেন্টিমিটার বা দেড় ফুট পর্যন্ত বেড়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে তাহলে সুন্দরবনের শতকরা পঁচাত্তর ভাগই হারিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা এছাড়া সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত একাধিক জলধারা গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ হিসেবে ব্যবহার করা হয় যার ধারাবাহিকতায় পণ্যবাহী জাহাজ গুলো দুর্ঘটনার মুখে উপরে ২০১৪ সালে এই বনের শিলা নদীতে সাওদা নামের একটি পণ্যবাহী জাহাজ ডুবে গিয়েছিল দুর্ঘটনার সময় জাহাজটিতে সাড়ে তিন লাখ লিটারের বেশি ফার্নিচার ছিল দুর্ঘটনার পর সে জ্বালানি তেল প্রায় সাড়ে ৩০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ায় সুন্দরবনের জীব.