তোমার মত অন্য কেউ নয় আমার তোমাকেই চাই । রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – Bangla Romantic Bhalobashar Golpo
তোমার মত অন্য কেউ নয় আমার তোমাকেই চাই । রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – Bangla Romantic Bhalobashar Golpo

তোমার মত অন্য কেউ নয় আমার তোমাকেই চাই (পর্ব 1) – Bangla Romantic Bhalobashar Golpo: তাওহীদ বাড়িতে মোবাইল ফোন নিয়ে ছটফট করছে। রাবেয়া বেগম ও মাইশা দুজনেই তাকে এত দ্রুত বাসায় দেখে অবাক হয়ে যায় এবং তাও মাদক ছাড়া। দুজনে একটু খেয়ে উঠে পড়লাম।
( ১ম পর্ব )
~ হ্যালো জাহিদ।
~জি আসসালামু আলাইকুম স্যার।
~ওয়ালাইকুম আসসালাম, জাহিদ, তুমি কি অফিসে?
~ হ্যাঁ স্যার আমি এখনো অফিসে আছি। কেন স্যার
~ তাওহিদের কোন খবর জানেন?
~না স্যার। তাওহিদ স্যার গতকাল সন্ধ্যায় বাইরে গেছেন।
সে এখনো বাসায় আসেনি। আর এখন তো অফিসেও না শুনলাম।
~ হুজুর, তাওহীদ স্যার আবার কি?
~তুমি খোঁজ করো জাহিদ, আমি একটু পরে অফিসে ঢুকবো।
~ হ্যাঁ স্যার
অনেকক্ষণ মাহবুব সাহেব তার অফিসের কর্মচারী জাহিদের সাথে কথা বলছিলেন। অফিসের যাবতীয় কাজে জাহিদ যেমন সক্রিয়, তেমনি মাহবুব সাহেবের পরিবারের হত্যাকাণ্ডেও সক্রিয়। মাহবুব সাহেব পুরো অফিসে একা এই জাহিদকে বিশ্বাস করেন। আসল কথা হল মাহবুব সাহেবের ছেলে তাওহীদকে গতকাল সন্ধ্যা থেকে আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। সেজন্যই তার এত টেনশন।
~হ্যা যাও, কোন খবর পেলে?
~জাহিদের মাধ্যমে খোঁজ নিয়েছি, আশা করছি শিগগিরই খবর পাব।
~ আমি বারবার বলেছি এবার ছেলেকে বিয়ে দাও, বিয়ে করো। কিন্তু তুমিও ছেলের সাথে নাচো। আমার ছেলে আজ শোকে মারা যাচ্ছে।
~আহ রাবেয়া থামো, এখন এসব বলো না। তাওহীদ আগে ঘরে আসুক, তারপর এসব নিয়ে কথা বলব।
~আমি বলছি এবার ছেলের বিয়ের ব্যবস্থা কর।
এই রাবেয়া মাহবুব। মাহবুব সাহেবের স্ত্রী, তাওহীদের মা। ছেলেকে নিয়ে ইদানীং বেশ টেনশনে আছেন বেচারী। মা হয়ে ছেলের এমন আচরণ কিভাবে মেনে নেবেন তিনি। কিন্তু এত আলোচিত-সমালোচিত তাওহীদকে দেখা যাচ্ছে না।
~ হ্যালো স্যার।
~হ্যাঁ জাহিদ বলো, কোনো খবর থাকলে?
~জ্বী স্যার, কাল রাতেও তাওহীদ স্যার।
~ হায় ঈশ্বর, কত, এখন কোথায় সে?
~ তার বাংলোতে, আমি নিয়ে আসছি আপনি কোন টেনশন নিবেন না স্যার।
~ যত্ন নিন, এবং আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জাহিদ।
~ স্যার এসব করার জন্য ধন্যবাদ নাকি আমাকে? চিন্তা করবেন না স্যার, আমি তাওহীদ স্যারের সাথে ফিরছি।
~আচ্ছা চলো।
প্রায় ঘণ্টাখানেক পর গাড়িটি ছায়া নিবাসের সামনে এসে দাঁড়াল। জাহিদ অনেক কষ্টে গাড়ি থেকে তাওহীদকে নিয়ে দরজার কাছে গেল, তখন দুইজন চাকর এসে তাওহীদকে ওপরের তলায় তার ঘরে নিয়ে গেল। হ্যাঁ, এটাই তাওহীদ। মাহবুব সাহেবের একমাত্র ছেলে এবং মাহবুব গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের একমাত্র উত্তরাধিকারী। যিনি সারাক্ষণ মত্ত। মাদকের অতল গহ্বরে ঢুকে পড়া এই তাওহীদ মাহবুব।
~জাহিদ বলেছেন যে আমি আপনাকে ধন্যবাদ দেব।
~ স্যার কিছু বলবেন না, এইটা আমার কর্তব্য এইটা আমার কর্তব্য স্যার।
~জাহিদ ছেলেকে এভাবে শেষ হতে দিতে পারে না। আমি তার বাবা, বাবা হয়ে আমার ছেলের সর্বনাশ দেখব কী করে?
~ স্যার এত টেনশন নিচ্ছেন কেন? উপরে যে বসে আছে তাকে ভাবতে দিন। তিনি নিজেই ব্যবস্থা করবেন।
আমি সেই অপেক্ষায় আছি
~স্যার, অফিসে একবার আসবেন? আসলে একটা মিটিং ছিল।
~হ্যাঁ, আসতেই হবে, আমি এখনো সেই ছেলেটাকে সব দায়-দায়িত্ব বোঝাতে পারিনি।
~স্যার তাহলে আমি উঠি আপনি অফিসে আসুন, আমরা সেখানে কথা বলব।
জাহিদ চলে গেলে মাহবুব সাহেব গভীর চিন্তায় ডুবে গেলেন। তার ছেলের এভাবে শেষ হওয়া তাকে স্তব্ধ করে দেয়। যে ছেলেটা তার ভার্সিটিতে টপার ছিল, মাশাআল্লাহ দেখতে খুব সুন্দর, সবদিক থেকে চোখে তাক লাগানোর মত, আজ সেই ছেলেটি মদ আর মাদকের নেশায় আহত। এসব ভাবতেই মাহবুব সাহেবের চোখ জ্বলে উঠল।
এ সময় সেখানে উপস্থিত হন রাবেয়া বেগম। স্বামীর চোখে জল দেখে তিনিও বিচলিত হয়ে পড়েন।
~ তুমি কি শুনেছ?
~ হ্যাঁ বল
~ এইবার ওর একটা বিয়ের ব্যবস্থা কর।
~বিয়ের দরকার নেই রাবেয়া, দেখো ওর অবস্থা, ওর ভেতরের সবকিছু মাদকে নষ্ট হয়ে গেছে। অমুক ছেলেকে কে বিয়ে করবে আর কোন মেয়ের বাবা এই ছেলেকে তার মেয়ে দিবে
~ তাওহীদ সবসময় নেশা করে না।
~ তারপরও আমি জেনেশুনে কিভাবে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করতে পারি?
~চেষ্টা করতে ক্ষতি কি? বিয়ের পর হয়তো আমার ছেলে ভালো হয়ে গেছে।
~আচ্ছা, তুমি বলো আমি যখন সার্চ দিব, দেখো আমি কি করতে পারি, আমি অফিসে গিয়ে ওর দিকে নজর রাখব।
~ আচ্ছা
মাহবুব সাহেব অফিসের দিকে আর রাবেয়া বেগম রান্নাঘরের দিকে, ছোট মেয়ে মাইশা এসে মায়ের পাশে দাঁড়ালো। হ্যাঁ, সে মাহবুব-রাবেয়া দম্পতির মেয়ে। তাওহীদের ছোট বোন, এবার সে মাত্র এইচএসসি পাশ করেছে। তবে সেও অনেক বুদ্ধিমান মাশাআল্লাহ। কথায় কথায় পৃথিবী ভুলে যায় একটি মেয়ে।
~ মা
~ হ্যাঁ
~ ভাই আজকে?
~ হ্যাঁ মা
~মা, বলছি তোর ভাইকে বিয়ে দিয়ে দাও, বউ থাকলে হয়তো কিছু পরিবর্তন হবে
~মা, তোর বাবাকে বলছিলাম কিন্তু তোর বাবা?
~বাবার কথাও ঠিক, সে নেশায়, যে ঠিক মত কথা বলতে পারে না তাকে কে বিয়ে করবে মা?
~ আমার ছেলের কপালে কি আছে জানি না।
এদিকে অফিসে এসেও মাহবুব সাহেব শান্তি পাচ্ছেন না। বউয়ের কথা ছুঁড়ে ফেলার মতো নয়। একবার চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কোথায়? এমন সময় মেয়েটির ফোন এলো।
হ্যালো বাবা
~হ্যাঁ মামুনি বলো।
~তুমি কি ব্যস্ত?
~না মামুনি বলো,
~বাবা, মেয়েটাকে ওর ভাইয়ের জন্য দেখো, ওকে এভাবে ছেড়ে দিলে ও নিজেকে আরও শেষ করে দেবে।
~ তোমার মাও একি বলেছে, দেখি মামুনি কি করতে পারে।
~আচ্ছা বাবা, রাখছি।
~ শোন তোর ভাই উঠে গেছে?
~ না, উঠিনি।
~আচ্ছা রাখো, রাতে কথা হবে।
~ আচ্ছা।
মেয়ের সাথে কথা বলার পর মাহবুব সাহেব আবার ভাবনায় বসলেন। কি করা যেতে পারে? এবার আর হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। এবার তাকে যা করতে হবে তাই করতে হবে।
মাহবুব সাহেব টেলিফোন হাতে নিয়ে জাহিদকে চেম্বারে আসতে বললেন।
আসবেন স্যার?
~ হ্যাঁ চলো জাহিদ, বসো
~কি ব্যাপার স্যার, এমন জরুরী তলব
~ জাহিদ কিছু একটা ভেবেছে
~কি খবর স্যার
~ আমি তাওহীদকে বিয়ে করব
~ স্যার
~হ্যা জাহিদ, আর কোন উপায় নেই। তোর খালাও এবার ছেলেকে বিয়ে করতে চায়।
~কিন্তু স্যার আপনি যা ভাবছেন তা আদৌ সম্ভব। কে তাকে বিয়ে করবে?
~জাহিদকে খুঁজতে হবে। তবে বড় ঘরের মেয়ে নয়, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে চাই। এটা আমার ছেলেকে বদলে দিতে পারে।
~ কিন্তু স্যার।
~কার মুখে কথা বলবে, যার চোখে জ্বলার শক্তি থাকবে, কে হবে অদম্য সাহসের অধিকারী, কে হবে আমার ছেলের রক্ষক।
এমন মেয়ে কোথায় পাবেন স্যার?
~ জাহিদকে খুঁজো, খুঁজো।
~ স্যার কিছু বলবেন?
~ বল
~স্যার, আমাদের ফ্যাক্টরিতে যিনি প্রধান হিসেবে নেই তিনি হলেন আফরোজ ম্যাডাম
~হ্যা, এখন কি হয়েছে
~তুমি চাইলে আমি তার সাথে কথা বলতে পারি, সে সব জানে, সে হয়তো ভালো মেয়ে খুঁজে পাবে।
~হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছ, আমি ওর নাম ভাবতে পারছি না, ঠিক আছে আমি ওকে আগামীকাল অফিসে ফোন করব, দেখি ও কি বলে।
~ ঠিক আছে স্যার
মাহবুব সাহেব ভালো মেয়ে পেলে ছেলের বিয়ের ব্যবস্থা করবেন। হয়তো এটাই আপনার ছেলেকে আসক্তি থেকে বাঁচানোর সেরা উপায়।